আষাঢ়-শ্রাবণ মাস এলেই আমার মনে পড়ে শৈশব-কৈশোরে দেখা পাতা চালা খেলার কথা। আর সেই সঙ্গে মানসপটে ভেসে ওঠে পাতা খেলার চালার গুণীক আমার দাদা । আমার দাদা ছোট থেকে তার উস্তাদ লোফরা প্রমানিক এবং মজির এর কাছে থেকে তন্ত্র মন্ত্র শিখেছিল ।
আমার প্রথম জীবনে আমার দাদা মোঃ অকিম উদ্দিন কবিরাজ ছিলেন পাতাচালা খেলার ওস্তাদ । তাঁর সঙ্গীয় গুণীক ছিল মজির দাদা,
ছোট বেলা দেখেছি, আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে চারদিকে পাতা চালা খেলার ধুম। ঢাকের আওয়াজ। তুলারাশি পাতার কদর আর দাদা দলের বাহাদুরী। অন্য গুণীকদল তাঁদের কাছে ছার। দাদার চাকল কেঁটে কোন গুণীকই পাতা আনতে পারতো না।
পাতাকে চাকল দিতে তিনি যে সমস্ত মন্ত্র পাঠ করতেন তার মধ্যে একটি আওয়াজ আমার মনে পড়ে-
‘‘দম, দম মাদার/ দম, দম মাদার/ হুয়াল কোরআন/ বাহিরে ভিতরে বন্ধোঁ/ বন্ধোঁ সোবহান/ ব্রহ্মা, বৃষ্ণ, মহেশ্বর/ চোখে, মুখে বন্ধোকর/ রামের হাতের ধনুর্বান/ কিয়ামতের থলি/ বাঘ ভাল্লুকের জবান বন্দোঁ/ হাঙ্গড়ের বন্ধোঁ বুলি/ রক্ষা কর রাজা বন্ধোঁ / প্রজা বন্ধোঁ / ডাকিনী বন্ধোঁ পিছে/১৮ হাজার আলম বন্ধো/ মা ফাতেমার জটে/
পাতাকে সিংগার দেওয়া মন্ত্রের মধ্যে একটি-
‘‘ শির শির তলোয়ারে বিষ/ মারণু চুট্কি উড়ানু বিষ/ ধা বিষ ধা/ আছমান-জমিনে ধা/ পাতার মণি মগজে ধা/সর্ব-শরীরে, রগে রগে রগে ধা/ ছু-----
তাঁর ডাক মন্ত্রের মধ্যে একটি মন্ত্রের নাম বার মাসী। সকলের জ্ঞাতার্থে বারমাসী মন্ত্র দিয়ে ইতি টানছি-
পাতা খেলার মন্ত্র
‘‘ আগন মাসে সু সংহতি।
শোনহে বিষের মহারাজ পতি \
পৌষ মাসে ধবল পড়ে।
তখন বিষ ঘোটকের পরে \
মাঘ মাসে তাতাল পাতাল।
বিষ তখন ভঁওরে পাতাল \
ফাল্গুণ মাসে গরল জাড়।
বিষের চোটে কাঁপে হাড় \
চৈত্র মাসে লাংগল ছেও।
আইলে বিষ পাড়ে ডেও \
শাওণ মাসে সিংহ রাণী।
শোনহে বিষের কাহিনী \
ভাদ্র মাসে আউশ ধান।
বিষে করে হান্ পান ্\
আশ্বিন মাসে কাইশা ফোলে।
বিষ তখন ঘাটা পথে চলে \
কার্তিক মাস বছরের শেষ।
পাতার হাতে বিষ করিল প্রবেশ \
উজান ছেড়ে বিষ যদি হেটে যাস।
দোহাই লাগে ৩০ কোটি দেবতা-
পদ্মাার মাথা খাস্ \
আঁচলি করার মন্ত্র-/
উবুচুবু দীঘি কোনা, বাঘের চক্কর গায়,
এই আচঁলি করিয়াছে, চাঁন-সুরুজের মায়।
মোর আচলি ছেড়ে যদি, অন্য আঁচলিত যাস।
দোহাই লাগে ৩০ কোটি দেবতা, পদ্মার মাথা খাস্
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন