কেন রত্ন ধারণ করবেন

প্রবাল পাথরের উপকারিতা,   প্রবাল পাথর পরার নিয়ম,   গোমেদ পাথরের উপকারিতা,   গোমেদ পাথরের দাম,   ক্যাটস আই পাথর পরার নিয়ম,   রুবি পাথরের উপকারিতা,   বিভিন্ন পাথরের নাম ও ছবি,   পোখরাজ পাথর পরার নিয়ম,

আমরা কেন রত্ন ধারণ করবো? 

এই প্রশ্নের বহু উত্তর আছে। আমি বহুবাদ দিয়ে এক কথায় বলবো জীবনকে সুখময় করবার জন্যই রত্ন ধারণ করা হয়।

আবার প্রশ্ন ওঠে— সুখ কী?

এই প্রশ্নের উত্তর ব্যাপক। কারুর ভোগৈশ্বর্যে সুখ, কারুর কামনা-বাসনা চরিতার্থ করাতে সুখ। কারুর বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গে বিহারে সুখ। আবার কারুর অগাধ টাকা-পয়সা, মান-মর্যাদা প্রাপ্তিতে সুখ। আবার কেউ সবকিছু ছেড়ে একাগ্রচিত্তে আত্মোপলব্ধিতে সুখ পান। অতএব, সুখ নানা প্রকার। এই সুখের অভাব হলেই নরনারী হতাশাক্ষুব্ধ হন। তখন চান কোন্ পথে এবং কি বস্তু গ্রহণ করলে তার সুখ আসবে। এই সুখ ও অসুখের মূলে বৌদ্ধরা বলবেন-কর্মফল। তান্ত্রিক জ্যোতিষীরা বলবেন— গ্রহ বা গ্রহদের বিরুদ্ধাচরণের জন্য সুখের অভাব হয়। গ্রহ বা গ্রহরা অনুকূলে থাকলে সুখ বৃদ্ধি ঘটে। এবং এই গ্রহদের জাতক জাতিকার অনুকূলে রাখবার জন্য রত্নাদি ধারণ একান্ত প্রয়োজন।

আমি এখানে “তান্ত্রিক জ্যোতিষী” কথা ব্যবহার করছি একটি নির্দিষ্ট অর্থে। কারণ “জ্যোতিষশাস্ত্র” কোন কারণেই গ্রহদের স্বপক্ষে আনবার কোন ব্যবস্থাদি দেয়নি। আমি দেখেছি, বহু প্রাচীন জ্যোতিষগ্রন্থ যাকে Astrology বলে, তাতে কোনোরূপ ব্যবস্থাদি নেই। ভারত, মেসোপটেমিয়া, মিশর থেকে শুরু করে সেই সুদূর গ্রীস ও রোম দেশে—জ্যোতিষ ও সামুদ্রিক বিদ্যায় নরনারীর জীবনের শুভ অশুভ বিচারের কথা আছে, নেই কোন গ্রহের জন্য কি রত্ন, যন্ত্র, কবচ বা মূল ধারণ করতে হবে। উক্ত জ্যোতিষশাস্ত্রকারগণ বলতে চেয়েছেন— যা ঘটবার তা ঘটবেই। কিন্তু আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলছি পরাশর, জৈমিণী, নারদ, বরাহমিহির, আর্যভট্ট এ-সব উপদেশ দেন নি। 

কিন্তু ভারতবষের কিছু ত্রিকালজ্ঞ ঋষি তাঁদের দুর্লভ জীবনের সাধনার সাহায্যে যে সকল বস্তু আবিষ্কার করেছেন তার দ্বারা গ্রহদের বিরূপ ভাব নষ্ট করতে পেরেছেন। তাঁদেরকে অথর্ব বেদে ঋষি এবং পুরাণ ও সম্রাট যুগে তান্ত্রিক জ্যোতিষী বলতে পারি। এঁরা এমন সব রত্ন, তন্ত্র, মন্ত্র, যন্ত্র, কবচ ও মূল আর ধাতুর সন্ধান পেয়েছেন যা যুগ যুগ যুগান্তর যাবৎ নিরাশাময় নরনারীর জীবনকে অন্ধকার থেকে আলোকে, মৃত্যু থেকে অমৃতে এবং অসৎ থেকে সত্যে নিয়ে যেতে সমর্থ হয়েছেন। এখন প্রশ্ন ওঠে—কখন কোন্ রত্ন ধারণ কোন অঙ্গে করতে হবে? এর উত্তরে আমি বলবো—রবির প্রিয় রত্ন চুনী যাকে মাণিক্য বলে। চন্দ্রের প্রিয় রত্ন চন্দ্রকান্ত মণি। মঙ্গলের হল লাল প্রবাল! বুধের পান্না । বৃহস্পতির পীত পোখরাজ। শুক্রের হীরা। শনি নীলা। রাহুর গোমেদ ও কেতুর বিড়ালাক্ষি মণি। এখন এই নিয়েও নানা মুনির নানা মত। কারণ এ ছাড়াও আরো রত্ন আছে। তাদের কি ব্যবহার করা নিষিদ্ধ? তা নয়। তবে সে-সম্পর্কে আমি পরবর্তী অধ্যায়ে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করবো। 

রত্ন ধারণের নিয়ম

নরনারীর শরীরের ঊর্ধ্বাঙ্গেই রত্ন ধারণ করবার বিধান দিয়েছেন শাস্ত্রকারগণ । অর্থাৎ নাভির উপর থেকে কণ্ঠ দেশে রত্ন ধারণ করতে হবে। এবং পুরুষের দক্ষিণ হাতের আঙ্গুলে বা বাহুতে ও নারীর বাঁ হাতের আঙ্গুলে, বাহুতে বা কণ্ঠে রত্ন ধারণ করতে হবে। অবশ্য এ কথা অর্বাচীন কিছু গ্রন্থকারগণ বলেন । প্রাচীন রত্নাদি গ্রন্থে এ-সব কথা নেই। আমি বলবো নর-নারী নির্বিশেষে দক্ষিণ হাতের আঙ্গুলে বা আঙ্গুলগুলোতে রত্ন ধারণ করবেন। আঙ্গুলে অসুবিধা হলে ডান বাহুতে রত্ন ব্যবহার করবেন। শিক্ষার্থীরা সর্বদা মনে রাখবেন— এই রত্ন ধারণের বিধান দিয়েছেন তান্ত্রিক জ্যোতিষীরা। শয়নৈকাদশী থেকে উত্থান একাদশী অবধি রত্নাদি কদাচ ধারণ করতে নেই।

আমি কামাখ্যায় এক তান্ত্রিক জ্যোতিষের কাছে শুনেছি—“পুষ্যা, হস্তা, মঘা, অনুরাধা, মৃগশিরা, ধনিষ্ঠা, উত্তরাষাঢ়া, উত্তরফাল্গুনী, উত্তর- ভাদ্রপদ, রোহিণী ও চিত্রা নক্ষত্রের শুক্লপক্ষের চতুর্থী, চতুর্দশী ভিন্ন শুভ যোগে ও শুভ করণে রত্ন ধারণ করতে হবে।”

আবার অনেক জ্যোতিষী বলেন, “স্ত্রীরা স্বামীর কল্যাণ কামনায় অশ্বিনী, রেবতী বা স্বাতী নক্ষত্রে রত্ন, শংখ ধারণ করবেন।"

বহু তন্ত্র শাস্ত্রে বলা হয়েছে—“রবির চুনী ধারণের সময় হল রবিবারের সপ্তমী তিথি ও সংক্রান্তির দিনে। চন্দ্রের রত্ন সোমবারের রাতে, শনি ও রাহুর নীলা, গোমেদ অমাবস্যার দিনে নিশীথ রাতের শনিবারে ধারণ করতে হয়। বৃহস্পতির পোখরাজ বৃহস্পতিবারের সকালে ধারণ করতে হবে। বুধের পান্না, কেতুর ক্যাটস্ আই বুধবারের দুপুরে ও মঙ্গলের প্রবাল ও শুক্রের হীরা মঙ্গলবার ও শুক্রবারের উষালগ্নে ধারণ করা উচিত। এই ব্যবস্থাদি নিয়ে চূড়ান্ত মতবিরোধও আছে।

Post a Comment

أحدث أقدم

এখানে ক্লিক করে বই ডাউনলোড করুন