যন্ত্র, কবচ ও মন্ত্র কি রত্নের চেয়ে শ্রেষ্ঠ?

 যন্ত্র, কবচ ও মন্ত্র কি রত্নের চেয়ে শ্রেষ্ঠ?

একদল রত্ন ব্যবসায়ী জ্যোতিষী বলেন—রত্নের চেয়ে শ্রেষ্ঠ বস্তু আর কিছু নেই। কথাটা সত্যি। রত্নের মূল্য সবচেয়ে বেশী। প্রকৃত রত্নের মূল্য গড়ে— 

চুনী এক রতি ৭০,০০০.০০, 

পান্না এক রতি ৪৮,০০০.০০, 

মুক্তা এক রতি ৪,০০০.০০, 

প্রবাল এক রতি ৫০০.০০, 

পোখরাজ এক রতি ৩,০০০.০০, 

হীরা এক রতি ১২,০০০.০০, 

নীলা এক রতি ৪,০০০.০০, 

গোমেদ এক রতি ২,৪০০.০০, 

ক্যাটস আই এক রতি ১,৮০০.০০ টাকা দাম। 

এবং মনে রাখবেন আপনি যত উঁচু দাম দিয়ে রত্ন ক্রয় করুন না কেন তার গুণ ২ বছর থেকে তিন বছর মাত্র। তন্ত্র-গ্রন্থগুলো সর্বদা রত্নের চেয়ে যন্ত্র, কবচ ও মন্ত্রের উপর জোর দিয়েছেন। তার পক্ষে যুক্তিও আছে।

মহাভারতে কর্ণের রত্নের অভাব ছিল না। তবু তিনি সূর্যের কবচকুণ্ডল ধারণে অপরাজেয় ছিলেন। যেদিন ঐ কবচকুণ্ডল ইন্দ্ৰ কর্তৃক অপহৃত হল, তিনি হলেন বীর্যহীন। পঞ্চ পাণ্ডবদেরও রত্নের অভাব ছিল না। তবু তাঁদের প্রকৃত বন্ধু শ্রীকৃষ্ণের উপদেশে, যুধিষ্ঠির সূর্যকবচ-সূর্যস্তব প্রার্থনা করেছেন বনপর্বে। ভীষ্মপুর্বে বা বিরাট পর্বে তিনি দুর্গাস্তব ও কবচ পাঠ করেন। ভীষ্ম বিষ্ণুর সহস্রনাম জপ করেছেন। সম্রাটদের তো রত্নের অভাব থাকে না। তবু পুত্র, ঐশ্বর্য ও শান্তির জন্য যজ্ঞের আয়োজন করেছেন। পরীক্ষিত শুকদেবের মুখ থেকে মহাভারত, অষ্টাদশ পুরাণ শ্রবণ করেছেন। তাঁর পুত্র জন্মেজয়ও শুনেছেন নিজ ও প্রজার মঙ্গলের জন্য। এমন কি সুলতান ও বাদশাহরাও যন্ত্র, কবচ ও মন্ত্রাদি ব্যবহার করতেন। আমি নিজের জীবনে দেখেছি রত্নের চেয়ে যন্ত্র ও কবচ ব্যবহারে দীর্ঘদিনব্যাপী ফল পাওয়া যায়। মন্ত্র জপ করলে গ্রহ বা গ্রহরা শুভ ফল দেন।

এবং আমি বলবো রত্ন,যন্ত্র, কবচ ছাড়াও ধাতু ও মূল ব্যবহার করা যেতে পারে। রবির জন্য চুনী তাম্রে, চন্দ্রের জন্য মুক্তা রূপায়, মঙ্গলের জন্য রক্তবণ তাম্র জড়িত প্রবাল, বুধের জন্য পান্নায় পিতল, বৃহস্পতির জন্য পোখরাজ সোনায়, শুক্রের জন্য হীরা প্লাটিনামে, শনির জন্য নীলা লোহায়, রাহুর জন্য গোমেদ রাং এ, কেতুর জন্য বৈদুর্যমণি সীসায় ধারণ করতে বলা হয়।

আমি হিন্দু তন্ত্র ও বৌদ্ধ তন্ত্র গ্রন্থ থেকে দেখেছি রবির যন্ত্র ও কবচ ত্রিলোহা (সোনা, তামা ও রূপা), চন্দ্রের যন্ত্র ও কবচ রূপায়, মঙ্গলের যন্ত্র ও কবচ তামায়, বুধের যন্ত্র ও কবচ সোনায়, বৃহস্পতি, শুক্র, শনির যন্ত্র ও কবচ সোনায়, রাহু ও কেতুর যন্ত্র ও কবচ সোনা-রূপায় প্রস্তুত করতে হবে। ববির জন্য বিল্বমূল, চন্দ্রের জন্য ক্ষিরিকা, মঙ্গলের জন্য অনন্তমূল, বুধের জন্য বৃদ্ধদারক, বৃহস্পতির জন্য ব্রহ্মযষ্টি, শুক্রের জন্য. সিংহপুচ্ছ, শনির জন্য শ্বেত বেড়েলা, রাহুর জন্য অশ্বগন্ধার মূল ব্যবহার করতে হয় পুরশ্চরণ করে। “জ্যোতিস্তত্ব” গ্রন্থে আছে— “ত্রিশূলীং ক্ষিরিকামূলং গোজিহ্বাং বৃদ্ধদারকম্ । ব্রহ্মযষ্টিং সিংহপুচ্ছীং বাট্যালং চন্দনং সিতম্॥


অশ্বগন্ধাং ক্ৰমাৎ সূৰ্য্যাৎ দধ্যাৎ দোষোপশান্তয়ে॥” আমি এই গ্রন্থে রত্নসহ যন্ত্র, কবচ, তন্ত্র-মন্ত্রাদি ও পুরশ্চরণ করবার নিয়ম আলোচনা করেছি যাতে সাধারণ নরনারী এর দ্বারা উপকৃত হন।

Post a Comment

أحدث أقدم

এখানে ক্লিক করে বই ডাউনলোড করুন