সিঁদুর পড়া ধূলা পড়া সরিষা পড়া স্তম্ভন মোহন আকর্ষণ বিদ্বেষণ তেল পড়া তিলক ধারণ পানপড়া উচাটন মারণ


আপনসার কথার অর্থ দেহবন্ধন বা নিজ নিজ দেহ রক্ষা করা। এই মন্ত্রটি তিনবার মাত্র পাঠ করিয়া নিজের গায়ে অথবা রোগীর গায়ে তিনবার ফুঁ দিতে হইবে। এই মন্ত্র পাঠ করিয়া যথায় ইচ্ছা তথায় যাওয়া যায়। আপন শরীরে কোন অদিষ্ট দুর্ঘটনা ঘটিবে না, দুষ্ট ব্যক্তির আক্রমণ ঘটিবে না, সর্পাদি বা হিংস্র জন্তু কোন ক্ষতি সাধন করিতে পারিবে না।

আপনসার মন্ত্র

বন্দকি বন্দন বিষম করি বন্ধন সারা গো। 

আমারে রক্ষিবেন জাতি জয় জগতি মা।। 

সূর্য চন্দ্র রক্ষিবেন আমায় রক্ষিবেন মা বসুমতি। 

সবার কৃপায় জানি ঘুচিবে আমার দুর্গতি।।

 ব্রহ্মা বিষ্ণু চৌদিকেতে করেন রক্ষা। 

আমারে রক্ষিবেন কামরূপ কামাখ্যা।

কার আজ্ঞে - রক্ষাকালীর আজ্ঞে— 

আপন স্মরিয়ে যাই হইয়া সাবধান।

 কোথাকারে যাইতে হইল পয়ান।। 

হাত বন্ধন, কণ্ঠ বন্ধন আর বন্ধন উদর চরণ, বানিলাম পিঠ-বুক ।

মনসার বরে মোর আর নাই দুঃখ ।।

অষ্টাঙ্গ বানিলাম আমি

মা মনসার বরে, কার সাধ্য আছে আরে

আমার দেহ স্পর্শ করে।।

কামরূপ কামাখ্যা মা দিয়েছেন বর।

বিধিবে না দেহ আর কোন দুষ্ট শর।

আর একটি আপনসার মন্ত্র

কালী কালী মহাকালী

ষোড়শী মাতঙ্গী রক্ষাকালী ।।

ভূত প্রেত দৈত্যি দানা,

সাপ বাঘ আর ফণা,

দেখা দিয়ে—

দিবে না যন্ত্রণা ।।

আজ্ঞা পাই মা কামাখ্যার।

আজ্ঞা পাই মা চামুণ্ডার ।।

এই মন্ত্র তিনবার পাঠ করিয়া গায়ে তিনবার চাঁটি মারিয়া যত্রতত্র যাওয়া যায়। ভূত, প্রেত, সাপ, বাঘ ইত্যাদির কোনরূপ ভয় থাকে না।

ষটকর্ম কাহাকে বলে?

শান্তিকর্ম, বশীকরণ, বিদ্বেষণ, স্তম্ভন, উচাটন এবং মারণ, এই ছয় প্রকারের কর্মকে ষটকর্ম আখ্যা দেওয়া যায়। 


শান্তি কর্ম

যে কার্য দ্বারা ব্যাধিনাশ কুকৃত্যাদি দূর এবং বিরুদ্ধ গ্রহদোষ নষ্ট হয়, তাহাকে শান্তিকর্ম বলা হয়।বশীকরণ

যে কার্যাদি বা মন্ত্রাদি প্রয়োগে জীবনকে বশীভূত করা হয়— তাহাকে বশীকরণ আখ্যা দেওয়া হইয়া থাকে।

 বিদ্বেষণ

যে কার্যাদি বা মন্ত্রাদি প্রয়োগে পরস্পরের মধ্যে বিদ্বেষ ভাব জাগরিত করা যায়, তাহাকে বিদ্বেষণ বলা হয়।

স্তম্ভন

যে কার্যাদি বা মন্ত্রাদি প্রয়োগে শরীরের বিভিন্ন অংশে প্রবৃত্তি বা সহজাত কর্মাদি রোধ করা যায়, তাহাকে স্তম্ভন বলা হয়। 

উচাটন

যে কার্যাদি বা মন্ত্রাদির সহায়তায় কোন ব্যক্তিকে যদি তাহার নিজের দেশ বা স্বীয় স্থান হইতে চ্যুত করা হয়, তাহাকে উচাটন বলা হইয়ে থাকে ।


মারণ

যে কার্যাদি ও মন্ত্রাদি দ্বারা জীবগণের বিনাশ সাধন সম্ভব তাহাকে মারণ বলা হয়।


বক্তব্য : যে সকল সাধক বা ব্যক্তি ষটকর্মাদি আচরণ করিতে চাহেন, তাহাদের ষটকর্মাদির দেবতা, দিক, ষটকর্ম ব্রতী হওয়ার সময় সম্বন্ধেও বিশেষ জ্ঞান থাকা আবশ্যক। শুধু মাত্র মন্ত্র পাঠ করিলেই চলিবে না, মন্ত্রশক্তিকে যথাযথ ভাবে সঞ্জীবিত করিয়া লইতে হইবে নতুবা ফল পাওয়া যাইবে না।


ষটকর্মের দেবতাদি

রতি, বাণী, রমা, জ্যেষ্ঠা, দুর্গ এবং ভদ্রকালী—ইহারা যথাক্রমে ষট্কর্মের দেবতা।

শান্তি কর্মের দেবতা= রতি বশীকরণ কর্মের দেবতা= বাণী

স্তন্তন কর্মের দেবতা= রাম

বিদ্বেষণ কর্মের দেবতা= জ্যেষ্ঠা

উচাটন কর্মের দেবতা= দুর্গা

মারণ কর্মের দেবতা = ভদ্রকালী

সাধক ষটকর্মে প্রবৃত্ত হইবার পূর্বে যে কর্মের যে যে দেবী, তাহার যথাবিহিত পূজা করিবেন।


ষটকর্ম ও নাড়ী

বাম নাসিকায় যখন ঈড়া নাড়ী, দক্ষিণ নাসিকায় যখন পিঙ্গলা নাড়ী এবং উভয় নাসিকায় যখন শ্বাস-প্রশ্বাস বয় তখন সুষম্মা নাড়ী। ঈড়া নাড়ীতে শ্বাস (বাম নাসায়) বহিবার সময় শান্তিকর্ম, পিঙ্গলা নাড়ীতে শ্বাস (দক্ষিণ নাসায়) বহিবার সময় ক্রুরকর্ম, যথা-বশীকরণ, মারণ স্তম্ভন, উচাটন ইত্যাদি করা বিধেয়। সুষুম্মা

নাড়ীতে শ্বাস বহনের সময় কেবলমাত্র ঈশ্বর চিন্তা করা উচিত।

ষটকর্মের দিকনির্দেশ

ঈশান কোণ =শান্তিকর্মের জন্য। 

নৈঝত কোণ = বিদ্বেষণ কর্মের জন্য। 

বায়ু কোণ = উচাটন কর্মের জন্য। 

অগ্নি কোণ = মারণ কর্মের জন্য। 

উত্তর দিক = বশীকরণ কর্মের জন্য।

পূর্বদিক = স্তম্ভন কর্মের জন্য।

ষটকর্মের তিথি-বার

দ্বিতীয়, তৃতীয়, পঞ্চমী ও সপ্তমী এই চার তিথি এবং বুধ, বৃহস্পতি, শুক্র ও সোমবার শাস্তিকর্মের ব্যাপারে প্রশস্ত। বৃহস্পতি, অথবা সোমবার ষষ্ঠি, চতুর্থী, এয়োদশী, নবমী,

অষ্টমী, দশমী তিথি হইলে—সেই বৃহস্পতি বা সোমবার পুষ্টি

কার্যাদি সাধন করা বিধেয়।

আকর্ষণ কার্য রবিবার, শুক্রবার, দশমী, একাদশী, অমাবস্যা, নবমী ও প্রতিবাদ তিথিতে বিশেষ প্রশস্ত।

শনিবার বা রবিবার সংযুক্ত পূর্ণিমা তিথিতে বিদ্বেষণ কার্য প্রশস্ত বলিয়া জানিবে ।

শনিবার ষষ্ঠি বা চুতুর্দশী বা অষ্টমী তিথি উচাটন কর্ম এবং শনিবার অমাবস্যা তিথি হইলে মারণ কর্ম প্রশস্ত বলিয়া জানিবে ।

স্তম্ভন কর্মে পঞ্চমী পূর্ণিমা তিথি এবং বুধ ও সোমবার বিশেষ ফলদায়। শান্তি, পুষ্টি ইত্যাদি শুভকর্ম শুভ গ্রহের উদয় কালে এবং মারণাদি ক্রুর কর্ম সকল অশুভ গ্রহ উদয়কালেই করা বিধেয়। মৃত্যুযোগ কালেই মারণ কর্ম সাধিত হইয়া থাকে।

ষটকর্মে লগ্নকাল

স্তম্ভন, কার্য সিংহ বা বৃশ্চিক লগ্নে করা বিধেয়। বিদ্বেষণ ও উচাটন কর্মাদি কর্কট অথবা তুলা লগ্নে প্রশস্ত হইয়া থাকে । শান্তিকর্ম, পুষ্টিকর্ম, বশীকরণ ও মারণ কর্মাদি মেঘ, কন্যা, ধনু

ও মীনলগ্নে করা বিধেয়।

উচাটন কর্মাদি মেষ, কন্যা, ধনু ও মীনলগ্নে সম্পাদন করা যায়।

ষটকর্মের নক্ষত্রাদি ৷

স্তম্ভন, মোহন ও বশীকরণ কার্যাদিতে মাহেন্দ্র ও বারুণ মণ্ডল অন্তর্গত নক্ষত্রগণই প্রশস্ত, কারণ উক্ত নক্ষত্রাদির সময় কার্য করিলে সাধক সত্ত্বর ফল পাইয়া থাকেন ৷

জ্যেষ্ঠা, উত্তরাষাঢ়া অনুরাধা ও রোহিণী-এই নক্ষত্রগণ মাহেন্দ্ৰ মণ্ডলের অন্তর্গত। উত্তরভাদ্রপদ ও অশ্লেষা নক্ষত্র বারুণ মণ্ডলের অধিগত।

পূর্বষাঢ়া নক্ষত্রেও উক্ত তিন প্রকার কার্যাদি সম্পন্ন করা যায়। বায়ুমণ্ডল অন্তর্গত ও বহ্নিমণ্ডল অন্তর্গত নক্ষত্রাদিতে বিদ্বেষণ ও উচাটন কর্মাদি শ্রেয়ঃ ।

অশ্বিনী, ভরণী, আদ্রা, শ্রবণা, ধনিষ্ঠা, মঘা, বিশাখা, কৃত্তিকা, পূর্বফালগুনী এবং রেবতী এই কতিপয় নক্ষত্র বায়ুমণ্ডলের অন্তর্গত এবং স্বাতী, হস্তা, মৃগগিরা, চিত্রা, উত্তরফালগুনী ও পূর্ণবসু প্রভৃতি নক্ষত্রগণ বহ্নিমণ্ডলের অন্তর্গত।

- যে সাধকগণ নক্ষত্র নির্ণয় করিয়া ষটকর্মাদিতে লিপ্ত হয়, তাহারা সত্ত্বর ফল পাইয়া থাকেন।

আরও উল্লেখযোগ্য যে দিবাভাগের পূর্বাহ্নে বিদ্বেষণ ও উচাটন কর্মাদি, অপরাহ্নে শান্তি, পুষ্টি কার্যাদি এবং প্রদোষকালে মারণ কার্যাদি করা বিধেয়।


ষটকর্মে বর্ণাদি জ্ঞান

বশীকরণ, আকর্ষণ ও ক্রুর কর্মে দেবতাকে শোণিত বর্ণের বলিয়া চিন্তা করিতে হইবে। শান্তি, পুষ্টি ও নির্বিষ করণে দেবতাকে শুক্ল বর্ণের (শ্বেত বর্ণের) বলিয়া ভাবিতে হইবে, স্তম্ভন কার্যে দেবতাকে পীতবর্ণ (হলুদ) উচাটন কর্মে দেবতাকে ধূম্র বর্ণ, উন্মাদকরণে দেবতাকে রক্তবর্ণ ও মারণ কর্মাদির স্থলে দেবতাকে কৃষ্ণবর্ণের বলিয়া চিন্তা করিতে হইবে।

মারণ কর্ম দেবতাকে সমুখিত, উচাটন কর্মে সুপ্ত এবং অন্যান্য সকল কর্মে দেবতাকে সমাসীন বলিয়া ভাবিতে হইবে।

অধিকাংশের মতে ষটকর্মের মন্ত্রাধিষ্ঠাত্রী দেবতা পঞ্চদশ বলিয়া

স্থিরীকৃত হইয়াছে, পঞ্চদশ দেবতাগণ যথাক্রমে—

রুন্দ্র, কৃজ, গরুড়, গন্ধব, যক্ষ, রক্ষ, অহি, কিন্নর, পিশাচ, ভূত, দৈত্য, ইন্দ্ৰ, সিদ্ধ, বিদ্যাধর ও অসুর।

শান্তি, পুষ্টি ও রক্ষা কর্ম

শান্তি কর্মের দেবী রতি, ষোড়শোপচারে রতি দেবীর পূজা করা বিধেয়। জপ ও হোমের মন্ত্রঃ

শাং শাংশিং শীং শৃং শোং

শৈং শোং শৌং শংশং স্বঃ স্বাহা ।।

ষটকর্মে ব্রতী হওয়ার পূর্বে মুখ শোধন করা বিধেয়, তাহা ছাড়া মন্ত্রের কূল্লকা করিলে কার্যসিদ্ধি। কূলুকার মন্ত্রাদি গুরুর নিকট হইতে শিক্ষা করা বিধেয়। মুখ শোধনের মন্ত্র ঃ

তারা বিধেয় :- হ্রীং হুং হ্রীং।

দুর্গা বিধেয় :- ঐঃ হ্রীং ঐং।

বগলা বিধেয় ঃ- ঐং হলীং ঐং ।

কালী বিধেয় ঃ ক্রীং ক্রীং ক্রুং কৈং ওঁ ক্রীং ক্রীং

কুল্লুকার মন্ত্রাদি দৃষ্টান্ত স্বরূপ নীচে উল্লেখ করা হইলঃ কালীর কূল্লুকার মন্ত্র ঃ- ক্রীং হ্রীং হুং ফট ।

বগলামুখীর কুল্লকার মন্ত্র ঃ- ওঁ হলীং ওঁ বগলামুখৈঃ ওঁ । নিম্মলিখিত মন্ত্রাদিতে অঙ্গন্যাস, করন্যাস ও প্রাণায়াম করিতে হইবে ।

অঙ্গন্যাস :- শং হৃদয়ায় নমঃ, শিং শিরসি স্বাহা। নার শং শিখারৈ বষ্ট শৈং কবচায় হুং শৌং নেত্রত্ররায় বৌষট শঃ করতল পৃষ্ঠাভ্যাং ফট ।

করন্যাস ঃ- গাং অঙ্গুষ্টাভ্যাং নমঃ শিং তর্জনীভ্যাং স্বাহা ঃ শৃং মধ্যমাভ্যাং বৌষট, শৈঃ অনামিকা ভাং হুং, শৌং কনিষ্ঠাভ্যাং বৌষট শঃ করতল পৃষ্ঠাভ্যাং অস্ত্রায় ফট৷ দেবতা বিশেষকে মস্তকে জপ করাকে কৃল্লুকা বলা হয়। দেবতা ও দেবীর একশত আটবার, নতুবা দশবার মন্ত্র জপ করা বিধেয়। প্রত্যেক দেব বা দেবীর স্বতন্ত্র কূল্লুকা মন্ত্র আছে। নিম্নে বগলামুখী ও কালীর কূল্লুকার মন্ত্র উল্লেখ করা হইল। বগলামুখীর ঃ- ওঁ হলীং ও বগলামুখৈঃ হলীং ওঁ । কালীর- ক্রীং হ্রীং হুংফট। 


কিঙ্করী সাধন

কিঙ্করী সাধনের দ্বারা বীরগণ সিদ্ধিলাভ করিয়া থাকেন।

উন্মত্ত ভৈরব উক্ত সিদ্ধি বিধান করেন : ইহার সহায়তায় শির স্ফুটিত হয়, দেহ বিশুদ্ধ হয় । বাম চরণ দ্বারা বেষ্টন করিয়া পূজার্চ্চনা ও অষ্ট সহস্রবার জপ করিলে স্বয়ং উমাদেবী সমাগত হইয়া সাধককে

বিবিধ রসমণ্ডিত ভোজ্যদ্রব্য দান করেন। বামপদ আক্রমণ করিয়া নিম্নলিখিত মন্ত্র আট হাজার বার জপে সাধক ভূতিনী সিদ্ধ হইয়া থাকেন।

মন্ত্র : ওঁ জ্বল জ্বল ব্রজ্রেন মারয় মারয় অমুকং ভূতিনং কুরু কুরু ফট।

গোরচনা দ্বারা কমলাদেবীর মূর্তি নির্মাণ করিয়া সেই মূর্তিকে বামচরণ দ্বারা আক্রমণ করিয়া সাধক অযুত সংখ্যক জপ করিবেন। জপান্তে যখন স্বয়ং লক্ষ্মীদেবী আবির্ভূতা হইবেন, তখন দেবীকে কুসুমাসন প্রদান পূর্ব্বক সাধন দেবীর নিকট বর প্রার্থনা করিবেন। এবং তদানুযায়ী দেবী সাধককে বর প্রদান করিবেন।

ভৈরবী দেবীকে বামচরণ দ্বারা আক্রমণ পূর্বক অযুত সংখ্যক ভৈরবী মন্ত্র জপ করিলে, জপান্তে তিনি কিঙ্করীরূপে সাধককে দর্শন প্রদান করেন

চামুণ্ডাকে বামচরণ দ্বারা আক্রমণ পূর্বক অযুতবার মন্ত্র জপ করিলে চামুণ্ডাদেবী প্রসন্ন হইয়া দাসীর মতই সাধকের বশ্যতা স্বীকার করিয়া থাকেন। এই একই নিয়মে তান্ত্রিক মতে যাবতীয় দেবদেবীর পূজা করা বিধেয়। শিবমন্দির গমন পূর্বক দেবাদিদেব মহাদেবের যথাবিহিত পূজা করিয়া অষ্ট সহস্র বার মন্ত্র জপ করা বিধেয়। বামচরণ দ্বারা আক্রমণ পূর্বক এইভাবে এক সপ্তাহে জপ করিলে শিব স্বয়ং প্রত্যক্ষ হইয়া সাধকের মনোরথ সিদ্ধ করেন ও সাধকের রাজ্য প্রদান করেন। এক সপ্তাহ বামচরণ আক্রমণ করিয়া নারায়ণ মন্ত্র জপে স্বয়ং নারায়ণ প্রসন্ন হইয়া সাধককে দর্শন দেন ও সাধকের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করেন।

পূর্ববিধ অবস্থায় যদি বামচরণ দ্বারা আক্রমণ করিয়া ব্রহ্মার মন্ত্র জপ করা যায়—তবে ব্রহ্মাও সাধকের বশীভূত হইয়া থাকেন। যদি সাধক যথাবিধি এক সপ্তাহ যাবৎ বাম পদের দ্বারা আক্রমণ করিয়া আদিত্য মন্ত্র জপ করবেন-তবে স্বয়ং সূর্যদেবও সাধকের দাস হন। এইভাবে চন্দ্র মন্ত্র জপ করিলে সাধক চন্দ্র সিদ্ধ হন এবং চন্দ্রদেব সন্তুষ্ট হইয়া সাধককে প্রতিদিন একপল স্বর্ণ প্রদান করিয়া থাকেন ।


ধন লাভার্থে যক্ষিণী সাধন

সাধক অশ্বত্থ বৃক্ষে বসিয়া “ওঁ এং ক্লীং শ্ৰীং ধং কুরু স্বাহা” এই মন্ত্র দশ সহস্রবার একাগ্রমনে জপ করিলে যক্ষিণী সিদ্ধ হইয়া থাকেন এবং প্রভূত অর্থ লাভ করিয়া থাকেন।


পুত্রলাভার্থে যক্ষিণী সাধন

আম্রবৃক্ষে উপবেশন করিয়া একাগ্রমনে “ওঁ হ্রীং হ্রীং হ্রীং পুত্রং কুরু কুরু স্বাহা” দশম সহস্রবার জপ করিলে অপুত্রক ব্যক্তিও পুত্র লাভ করিয়া থাকেন ।


মহালক্ষ্মীর জপ

মন্ত্রঃ- ওঁ এং হ্রীং ক্লীং মহালক্ষ্যৈ নমঃ

বট বৃক্ষে আরোহণ করিয়া একাগ্রমনে “ওঁ এং হ্রীং ক্লীং মহালক্ষ্যে নমঃ”– এই মন্ত্র অযুতবার জপ করিলে মহালক্ষ্মী যক্ষিণী সাধকের গৃহে অচঞ্চলভাবে অবস্থান করেন ।


জয় লাভের জন্য মন্ত্রঃ 

ওঁজয়ং কুরু কুরু স্বাহা

আকন্দ বৃক্ষে আরোহণ করিয়া একাগ্রমনে “ওঁ’ জয়ং কুরু কুরু স্বাহা” এই মন্ত্র অযুত সংখ্যক (দশ সহস্রবার) জপ করিলে জয়া নামিনী যক্ষিণী প্রসন্ন হইয়া সাধককে সকল কর্মে বিজয়ী করিয়া থাকেন।

রাজ্য লাভার্থে

তুলসী তরুমূলে উপবেশন করিয়া দশ সহস্রবার “ওঁ ক্লীং ক্লীং নমঃ”-এই মন্ত্র দশ সহস্রবার জপ করিলে- যক্ষিণী প্রসন্ন সাধককে রাজ্য প্রদান করিয়া থাকেন।

মন্ত্র :- ওং ঐং ক্লীং নমঃ ।


সঙ্কটত্রাণার্থে

আমলকী তরুর মূলদেশে উপবেশন করিয়া “ও’ ঐং ক্লীং নমঃ” এই মন্ত্র একাগ্রচিত্তে জপ করিলে যক্ষিণী প্রসন্ন হইয়া সাধকের সকল বিপদ দূর করেন।

মন্ত্রঃ- ওঁ হৌং নমঃ ।


রাজাধিরাজ্য তুল্য সম্মান ও প্রতিপত্তি লাভেঃ

আকাড় বৃক্ষে আরোহণ করিয়া “ও হৌং নমঃ”- এ মন্ত্র অযুতবার (দশ সহস্রবার) জপ করিলে যক্ষিণী প্রসন্ন হইয়া সাধককে রাজাধিরাজ তুল্য সম্মান, প্রতিপত্তি ও অর্থ দিয়া থাকেন ।


সর্ব কার্যে সফলতা লাভের জন্য

মন্ত্ৰ :- বাঙক্ষয়ায়ৈ নমঃ।

কুশমূলে উপবেশন করিয়া একাগ্রমনে “ও’ বাত্ক্ষয়ায়ৈ নমঃ” এই মন্ত্র দশ সহস্রবার জপ করিলে যাবতীয় কার্য সফল হইয়া থাকে ।


বাক্ সিদ্ধি

মন্ত্রঃ- ওঁ হ্রীং ভারত্যৈ ঈঃ নমঃ।

অপামার্গ তরুমূলে আসীন হইয়া “ওঁ হ্রীং ভারত্যৈ ঈং নমঃ-” এই মন্ত্র দশ সহস্রবার জপ করিলে যক্ষিণী প্রসন্ন হইয়া সাধককে বাক্‌সিদ্ধি প্রদান করেন।


চতুর্দশ বিদ্যা কণ্ঠস্থ করিবার মন্ত্র

মন্ত্র :- ওঁ হ্রীং শ্ৰীসাদায়ৈ নমঃ।

যজ্ঞডুমুর বৃক্ষে সমাসীন “ওঁ হ্রী শ্রীসারদায়্যৈ নমঃ”-এই মন্ত্র দশ সহস্রবার জপ করিলে যক্ষিণী প্রসন্ন হইয়া চতুর্দশ বিদ্যায় সাধককে সিদ্ধি দান করেন এবং তাহার পুস্তক সিদ্ধিও হইয়া থাকে ।

মন্ত্রঃ- ওঁ সরস্বত্যৈ নমঃ ।

নিসিন্দা বৃক্ষমূলে সমাসীন হইয়া “ওঁ সরস্বত্যৈ নমঃ”- এই মন্ত্র অযুতবার (দশ সহস্র) বার জপ করিলে সাধক নিশ্চয়ই বহুবিদ বিদ্যা আয়ত্ত করিতে পারিবেন ।

মন্ত্রঃ- ওঁ জপম্মাত্ৰে নমঃ ।

শ্বেতবর্ণ গুঞ্জাবৃক্ষে আরোহণ পূর্বক একমনে “ওঁ জপম্মাত্রে নমঃ” এই মন্ত্রে দশ সহস্রবার জপ করিলে যক্ষিণী সন্তুষ্ট হইয়া সাধককে প্রার্থিত বর প্রদান করেন।


ক্রোধরাজের মন্ত্র সাধন

এই মন্ত্রের সহায়তায় আলস্যপরায়ণ, পাপাচারী ব্যক্তিও আসাধ্য সাধন করিয়া রাজাতুল্য ক্ষমতার অধিকারী হইতে পারেন।

মন্ত্রঃ—“ওঁ হন্ হন্ বিধ্বংসয় বিধ্বংসয় নাশয় নাশয় পাপং হুং ফট স্বাহা।” ইহাকে চেটিয়া সাধনও বলা হইয়া থাকে। আলস্যপরায়ণ পাপাচারী এমনকি গুরু হত্যাকারী ব্যক্তিও এই মন্ত্র বলে রাজ্যতুল অধিকারী হইতে পারে।

“ও হন্ হন্ বিধ্বংসয় বিধ্বংসয় নাশয় নাশয় পাপং হুং ফট্স্বা হা।”

এই মন্ত্র জপ করিয়া সাধক ভূতিনী, যক্ষিণী ও নাগনন্দিনীগণকে অনায়াসেই বশীভূত করিতে পারেন। এই মন্ত্র পুটিত করিয়া জপ করিলে সাধক নিশ্চয়ই সিদ্ধ হইবেন।


শত্রু নাশের মন্ত্র

মন্ত্রঃ “ও” হৌং ক্রং ক্রং কটু কটু ওঁ ক্রুংক্রুং ও অঃ।”

এই মন্ত্র অষ্ট সহস্রবার জপ করিলে যক্ষিণী, ভূতিনী, নাগিনী ইত্যাদি দেবীগণ সাধকের বশীভূত হন এবং এই মন্ত্র জপের প্রতিক্রিয়াস্বরূপ, সাধকের যাবতীয় শত্রুগণ ধ্বংসপ্রাপ্ত হইয়া থাকেন ।

গোরোচনা দ্বারা ভূতিনীর প্রতিকৃতি আঁকিয়া বামপদ দ্বারা তাড়না করিয়া অষ্ট সহস্রবার মন্ত্র জপ করিতে হইবে। মন্ত্র জপান্তে ভূতিনীগণ হা হা হী হী ইত্যাদি বিকট শব্দ করিয়া সাধক সমীপে উপস্থিত হইয়া সাধককে জিজ্ঞাসা করিবে-“তোমার কি কার্য সম্পাদন করিতে হইবে ?”

ভূতিনীগণের দ্বারা এইরূপ জিজ্ঞাসিত হইয়া সাধক বলিবেনঃ “তোমরা আজীবন আমার বশীভূতা হইয়া থাক এবং আমার আজ্ঞা পালন কর।”

গোরোচনা দ্বারা ভূতিনীর প্রতিমূর্তি অঙ্কন করিয়া এবং বাম পদ দ্বারা আক্রমণ করিয়া অষ্ট সহস্রবার জপ করিবার পরও যদি ভৃতিনী সাধক সমীপে উপস্থিত না হন, তবে “ওঁ হ্রীং কুং কুং কুং মম শত্রুণ মারয় হ্রীং হুং অং”- এই মন্ত্রে শ্বেত সরিষা দ্বারা ভূতিনী তাড়না করিতে হইবে। ভূতিনী যদি তবুও না আসে তাহা হইলে ভূতিনী মৃত্যুমুখে পতিত হইবে। তখন মধু দ্বারা ভূতিনীর শরীর সিঞ্চন করিলে সে পুনরায় জীবন ফিরিয়া পাইবে এবং সাধককে বস্ত্রালঙ্কার প্রভৃতি দান করিবে এবং সাধকের বশীভূত হইয়া অবস্থান করিবে। রাত্রিকালে মন্দির দ্বারে গমন পূর্বক অষ্ট সহস্রবার মন্ত্র জপ করিলে ভূতিনী সাধক সমীপে উপস্থিত হন। তখন বলিদানাদি দ্বারা সাধককে ভূতিনীর প্রীতি সাধন করিতে হয়।

ভূতিনী প্রীত হইয়া সাধককে বলিবে-বৎস! “তোমার কি কার্য আমাকে সম্পাদন করিতে হইবে?”

সাধক তখন উল্লসিত হইয়া ভূতিনীকে বলিবেন ঃ “তুমি আমার জননী হইয়া আমাকে সন্তানের ন্যায় প্রতিপালন কর।”

তখন ভূতিনী সাধককে অমূল্য বসনাদি, নানাবিধ ভোজ্য ও বহুমূল্য অলঙ্কারাদি প্রদান করিয়া থাকে।

যদি ভূতিনী এইরূপ না করে তবে তাহার দেহ শুষ্ক হইয়া নিশ্চয়ই লয়প্রাপ্ত হইয়া থাকে ৷


নটী সাধনের জপ ও পূজার মন্ত্র

৭ জপের মন্ত্র ঃ- ওঁ হুং ফট্ ফট্ নটী হুং হুং।। ধ্যানের মন্ত্র ঃ- ফুল্লেন্দীবর সুন্দরোদরমুখী প্রোতুঙ্গা।

কুম্ভস্তনী মৃগযগ্মনয়না সানন্দাহলাদস্মিতা।। ক্ষীরায়ু নিধি সম্ভবা বিলসিতা সানুহৈরিনাশিনী ।

বীণাসঙ্গতশালিনী মণিময় কুণ্ডলৌ,

নীচাগঙ্গামং গত্বা সপ্তাহ জপ পূজনে ।।

গঙ্গা বা যে-কোন পবিত্র নদী তীরে গমন করিয়া সপ্তাহ যাবৎ ধূপ, চন্দন ও নৈবেদ্য প্রভৃতি দ্বারা নটীর পূজা ও জপ করিতে হয়

সিদ্ধি ভবতি নটীকা ধূপং দদ্য ন্মহূর্মূ হুঃ।

চন্দনেনার্ঘ্যং দেয়ঞ্চ নৈবেদ্যঞ্চ মনোহবং।।

সদা কাম ভাগার্থী ভাৰ্য্যা ভবতি নর্তকী।।

সুবর্ণপলমেকন্ত ব্যাযার্থং ত্যত্ত্বা গচ্ছতি। দিনে দিনে নটী দেব স্থায়নী ভবতি ধ্রুবম্ ।।

একাগ্র মনে সপ্তাহ কাল নটী পূজা করিলে নটী প্রসন্ন হইয়া সাধকের পত্নী হয় এবং প্রত্যহ সাধককে এক তোলা স্বর্ণ প্রদান করেন। কিন্তু সাধকের পত্নী বা অন্য কোন প্রেয়সী না থাকাই বাঞ্ছনীয়। কারণ নটী সপত্নী বা অন্য কোন প্রতিদ্বন্দ্বী সহ্য করিতে পারেনা।

বেতাল সিদ্ধি

কুলতিথি ও কুল নক্ষত্রে মঙ্গলবারে মধ্য রাত্রিকালে (নিশা) সাধক শ্মশানে নিম্বকাষ্ঠ প্রোথিত করিবেন এবং তথায় উপবেশন করিয়া এক লক্ষ আটবার মহিষমৰ্দ্দিনী মন্ত্র জপ করিবেন। পরবর্তী কালে তথায় বসিয়া সহস্রবার হোমযজ্ঞ করিতে হইবে। হোমান্তে সেই প্রোথিত নিম্বকাষ্ঠ উত্তোলন করিয়া তাহাতে দণ্ডও পাদুকা অঙ্কন করিতে হইবে। তদনীন্তর দুর্গাষ্টমী দিনে নিশাকালে সেই নিম্বকাষ্ঠ নিক্ষেপ করিয়া, তাহার সব স্থাপন বা নির্মাণ করিয়া বিধি অনুসারে পূজা করিতে হইবে ।

পরবর্তীকালে সাধক শবাসনে উপবেশন করিয়া এক সহস্র আটবার মন্ত্র জপ করিবেন এবং বলি প্রদান করিয়া আরাধ্য দেবীর সন্তুষ্টি বিধান করিবেন ও দেবীগণকে আমন্ত্রণ করিবেন।


আমন্ত্রণের মন্ত্র

স্ফেং স্ফেং মহাভাগ যোগিণী হৃদয়প্রিয়।

মম হস্তস্থিতো নাথ মমজ্ঞাং পরিপালয় ।।

উপরোক্ত মন্ত্রে আমন্ত্রণ করিতে হয়। এরূপে নিম্বকাষ্ঠকে আমন্ত্রণ পূর্বক যে যে স্থানে বেতালকে নিযুক্ত করা হইবে— লোককে চূর্ণ করিয়া পুনরায় সাধকের নিকট ফিরিয়া আসিবে। দন্ডে সেই

অথবা “হে পাদুকা! তুমি আমার চরণ স্পর্শ করা মাত্র শীঘ্র শত যোজন পথ অতিক্রম কর।” বলিয়াও আমন্ত্রণ করা যায়। তদনন্তর অষ্টলৌহ দ্বারা পঞ্চাশ অঙ্গুলি পরিমাণ তরবারি প্রস্তুত করিয়া, তাহাতে মন্ত্রস্থাপন (লিখন) পূর্বক জপ করিতে হইবে।

তাহার পরে মহাশবের দেহে সহস্রবার হোম করিয়া, সেই দিনে মহাশবকে মৃত্তিকা মধ্যে প্রোথিত করিয়া রাখিতে হইবে।

পরের দিবস সেই সব মৃত্তিকা হইতে উত্তোলন করিয়া জীববৃক্ষের আগায় বাঁধিয়া শুকাইতে হইবে ।

আমন্ত্রণ মন্ত্র :-“আং ঘ্রাং ঘ্রাং ঘ্রাং ঈং উং কুরু কল্যাণং। বিপক্ষ ছেদ বিস্তরং।”

প্রতি পূর্ব দিবসে শ্মশানে গিয়া শবকে উরোক্ত মন্ত্রে আমন্ত্রণ করিতে হইবে কুলাষ্টমী দিবসে নিশাসময়ে একাগ্র মনে ও সংগত চিত্তে চিতামধ্যে উহার হোম করা বিধেয়।

শবের পদদ্বয় হইতে মস্তক পর্যন্ত বিল্বপত্র মধুত্রয় মিশ্রিত করিতে হইবে। এবং হোম শেষে পিতৃপুরুষের তর্পণ করিতে হইবে।

বলি শেষে বলি-পূর্ণননা পরামাকৃতি পরমা মায়া মহিষামৰ্দ্দিনী তথায় আগমন করিয়া সাধককে তরবারি প্রদান করিবেন এবং বলিবেনঃ

-'বৎস! তরবারি গ্রহণ কর।'

তখন সাধক অসি গ্রহণ করিয়া মূল লিখিত মন্ত্রদ্বারা অভিহিত করিয়া যাহার উদ্দেশ্যে অসি নিক্ষেপ করিবেন অসি তাহাকেও খণ্ড বিখণ্ড করিয়া তাহার নিকট আসিবে।

আরও একটি উপায় আছে। যথা— এক আঘাতে একটি কালো বর্ণের বিড়ালকে ছেদন করিয়া নিশাকালে মন্ত্র পাঠ করিয়া বিড়ালকে চার পথের মোড়ে প্রোথিত করিয়া একটি কলাগাছ রোপণ করিতে হইবে ।

সেই কলা গাছে পাতা গজাইলে তাহাতে সাধককে হবিষ্যান্ন ভোজন করিয়া একাকী অন্ধকার স্থানে নির্ভয়ে প্রত্যহ এক সহস্র আটবার মন্ত্র জপ করিতে হইবে।

আবার পুনরায় কলাগাছে পাতা জন্মাইলে একটি ছিদ্রহীন পত্র ছেদন করিয়া তাহাতে হবিষ্যান্ন ভোজন করিয়া সেই দিবসেই মৃত্তিকায় প্রোথিত সেই কালো বিড়ালের অস্থি উত্তোলন করিতে হইবে।

তাহার পর বন্ধু-বান্ধবের সহিত সেই অস্থি লইয়া নদীতীরে গিয়া মন্ত্র পাঠ পূর্বক অস্থিকে ধুইতে হইবে।

উক্ত অস্থি স্রোতজলে নিক্ষেপ করিবার পর সেই অস্থিখানি ভাসিতে ভাসিতে স্রোতের প্রতিকূলে গমন করিবে। সেই অস্থিখানি পুনরায় গ্রহণ পূর্বক ঘোর দামিনী কালীদেবীর অর্চ্চনা করিতে হইবে।

তদনন্তর সহস্রবার কালীমন্ত্র দ্বারা উক্ত অস্থিখানিকে অভিমন্ত্রিত করিতে হইবে ৷

এই প্রকারে সাধন করিলেই সাধক নিশ্চয়ই সিদ্ধাঞ্জন হইবে ইহাতে কোন সন্দেহের অবকাশ নাই।

চন্দনাগুরু কস্তুরি মিশ্রিতঞ্চাস্থিরর্ষিতং।

কৃত্বা তিলকলাদায় সৰ্ব্বং জয়তি সাধকঃ।।

ফুলমীনং কুলন্নাঞ্চ কুল মদ্য, ফুলেশ্বর। কুলস্থানে সমানীয় নত্বা দেব্যৈ প্ৰদত্বতঃ । অষ্টোত্তর ফুতকার মাত্রেশ বিবরং তত্র জায়তে ।।

শতযোজন দূরে বা যত্র সাধ্যাস্থিততর্ভবেৎ।। দুর্গামন্ত্রং বিনা বৎস কালীমন্ত্ৰ তথৈবচ৷

তত্রৈব গমনং তস্য ভূতলান্তঃ প্রসগিনং।।

এবং বিবরমধ্যে তু গবাক্ষ কুহরেহপি বা।

কারসঙ্কোচনাসাদ্য গচ্ছত্য বিকলো নরঃ।

সিদ্ধয় কুল থাথেশ জায়ন্তন কথঞ্চন।।

ওই অস্থির সহিত চন্দন অগুরু ও কস্তুরী মিশ্রিত করিয়া সাধক তিলকধারণ করিলেই সকলকেই সহজে পরাজিত করিতে পারিবেন।

কুলমৎস্য কুলয়ি কুলমদ্য কুলস্থলে আনিয়া সযত্নে দেবীকে অর্পণ করিয়া ভূতলে উপবেশন করিয়া সাধককে এক সহস্র আটবার মন্ত্র জপ করিতে হইবে।

তদনন্তর সাধক ভূতলে ফুঁৎকার দিলে তথায় গহ্বর সৃষ্টি হইবে।

বাঞ্ছিত দ্রব্য বা ব্যক্তি একশত যোজন দূরে থাকিলেও সাধক সেই গহ্বর দিয়া সহজেই তথায় গমন করিতে সক্ষম হইবে।

ক্ষুদ্র গহবর দিয়া সাধকের যাওয়ার পক্ষে কোন অসুবিধার সৃষ্টি হইবে না ৷

যাহারা দুর্গা বা কালী মন্ত্রে দীক্ষিত তাহাদের পক্ষেই এই রূপ সাধন সম্ভবপর। 


নটিনী সাধন

বিশ্বামিত্র নটিনী সাধন করিয়াছিলেন—এই সাধনের ফলে তিনি মতিবলা বিদ্যা প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। প্রাণবান্তে মহামায়া নটিনী পাবকপ্রিয়া।

মহাবিদ্যা হি কথিতা গোপনীয় প্রযত্নতঃ।।

অশোকস্য তটং গত্বা স্নানং পূর্বাবদাচরেং।

মূল মন্ত্রেণ সফলং কুৰ্য্যাচ্চ সুসমায়িত।।

মূলের লিখিত মন্ত্র দ্বারা এই কার্য সম্পাদন করিতে হয়। এই মন্ত্র অত্যন্ত গোপনীয়। সাধক অশোকতরুর মূলদেশে উপবেশন করিয়া মূলমন্ত্র দ্বারা যথাবিহিত দেবীর অর্চনা করিবেন।


দেবীর ধ্যান মন্ত্র

ত্রৈলোক্যমোহিনীং গৌরীং বিচিত্র্য স্বরধারিণীং। বিচিত্রলঙ্কৃতাং রমাং নর্ত্তকীরেশধানিরীম্।।

এবং ধ্যাত্মা জপেন্মন্ত্র সহস্রঞ্চ দিনে দিনে।।

দেবী গৌরাঙ্গী বিধি ও বিচিত্র বসন ভূষণা নর্তকী বেশধারিণী যাহার রূপলাবণ্যে ত্রিলোক বিমোহিত।

উপরোক্ত ভাবে দেবীর ধ্যান করিয়া যথাবিহিত পূজা করিয়া প্রতিদিন সহস্রবার ধ্যান মন্ত্র জপিতে হইবে।

মাংসোপহারৈঃ সম্পূজ্য ধূপদীপৌ নিবেদয়েৎ গন্ধচন্দন তাম্বুলঙ দদ্যত্তম্মৈ সদা বুধঃ।।

মাংস উপহার, ধূপদীপ, গন্ধপুষ্প, গন্ধচন্দন নৈবেদ্য ও তাম্বুল দেবীকে অর্পণ করিতে হইবে।  মাসমেকন্তু তাং ভক্তা পূজায়ে সাধকোত্তমঃ ।

মাসান্তদিবসং প্রাপ্য কুৰ্য্যাচ্চ পুজনং মহৎ।। অর্ধরাত্রৌ ভয়ং দত্ত্বা কিঞ্চিৎ সাধকোত্তমে। সুদৃঢ়ং সাধকং মত্ত্বা যাতি সা সাধকালয়ম ।। বিদ্যাভিঃ সকলাভিশ্চ কিঞ্চিৎ স্মেমুখী ততঃ

ররং বরয় শীঘ্রং ত্ব যত্ত্বে মনসি বৰ্ত্ততে।।

একমাসকাল যথাবিধি এইরূপ পূজা ও জপ করিতে হইবে। এবং মাসের শেষ দিবসে বিধানানুযায়ী মহাপূজার আয়োজন করিতে হইবে।

সেই দিবসই নিশাসময়ে দেবী সাধককে নিকটবর্তী হইয়া প্রথমে তাহাকে নানারূপ ভীতি প্রদর্শন করিবেন। কিন্তু তাহাতে সাধকের ভয়গ্রস্ত হইলে চলিবে না। নির্ভয়ে ধৈর্য ধারণ পূর্বক হৃদয়ে দেবীর ধ্যান করিতে হইবে।

দেবী যখন ভয় প্রদর্শন করিয়াও সাধকের সাধনা হইতে নিবৃত্ত করিতে পারিবেন না তখনই দেবী প্রসন্না হইয়া সাধককে বর প্রদান করিতে চাহিবেন।

তৎশ্ৰুত্বা সাধকশ্রেষ্ঠঃ ভাবয়েন্মসাধিয়া। মাতরং ভগিনীং বাপি ভাৰ্য্যাং বা প্রীতিভাবতং ।

তখন সাধক স্বীয় কামনা বা ইচ্ছানুযায়ী দেবীকে ভাৰ্য্যা বা ভগ্নী বলিয়া সম্বোধন পূর্বক ভক্তি প্রদর্শন ও দেবীর প্রীতি সাধন করিবেন। সাধকের এমম্বিধ আচরণে দেবী প্রসন্না হইয়া সাধকের মনস্কামনা পূর্ণ করিবেন। ষাতা স্যাদ্‌ যদি সা দেবী পুত্রদৎ পাল্লয়েম্মুদা। স্বর্ণশতং সিদ্ধিদ্রব্যং দদাতি সা দিনে দিনে।

যদি নটিনী দেবীকে মাতৃরূপে আরাধনা করা যায় এবং দেবী যদি সাধককে পুত্রসম প্রতিপালন করেন তবে তিনি সাধককে প্রত্যহ একশত স্বর্ণমুদ্রা ও অভিলষিত দ্রব্যাদি দান করিয়া থাকেন।

ভগিনী যদি সা কন্যাং দেবস্য নাগ কন্যাকাম্।

রাজকন্যা সমানীয় দদাতি সা দিনে দিনে ।

“দেবীকে ভগিনীভাবে অর্চনা না করিলে দেবী সাধককে প্রতিদিন রাজকন্যা ও নাগকন্যা আনিয়া দেন, তাহাদের সহায়তায় সাধক ভূত, ভবিষ্যত করিতে পারেন।

দেবীকে যদি সাধক ভার্য্যারূপ আরাধনা করেন, তবে দেবী সাধককে প্রভূত সম্পত্তি নানাবিধ ভোজ্য ও একশত স্বর্ণমুদ্রা প্রদান করেন। উপরন্তু সাধক যাহা কামনা করেন, দেবী প্রসন্ন হইয়া অভিলষিত দ্রব্যাদি প্রদান করেন।

প্রেতসাধন

ভৈরবী মন্ত্র ঃ “স্থৈহস ক্লবী স্থৌ”


সাধককে শনি অথবা মঙ্গলবার নিশাসময়ে শশ্মশানমধ্যে গমন করিয়া উলঙ্গ অবস্থায় চিতাভস্মের তিলক ধারণ করিয়া শশ্মশানমূলে সমাসীন হইয়া একসহস্র অষ্টোত্তরবার ভৈরবী মন্ত্র জপ করিতে হইবে । জপান্তে সাধক প্রেত সিদ্ধ হইবেন ।

ভৈরবীমন্ত্র জপকালীন সাধকের চোখে নানা ভীতি প্রদর্শিত হয়, বা ভয়ঙ্কর ভূতপ্রেতাদি দৃষ্টিগোচর হইয়া থাকেন এবং ঐ সকল ভূতপ্রেতাদি সাধকের চারিপার্শ্বে কঙ্কাল ও নানাবিধ অস্থি নিক্ষেপ করিতে থাকে।

এরূপ ক্ষেত্রে কোন ভাবে বিচলিত না হইয়া সাধককে নিবিষ্ট চিত্তে একাগ্রমনে জপ করিতে হইবে, নতুবা বিপদ অনিবার্য।

একমনে অবিচলিতচিত্তে সাধনার পর সাধক ভৈরবী দর্শন লাভ করিবেন, সাধক তখন ঐ প্রেত চতুষ্টয়ের দ্বারা অনেক অসাধ্য সাধন করাইয়া লইতে পারেন।

“জং ঠং স এ ঙ্গল জঁঃ ঠ”

5, উপরিলিখিত মন্ত্রে ঐ প্রেত চতুষ্টয়কে আমন্ত্রণ জানাইতে হইবে। মন্ত্রের অক্ষর বাদ পড়িলে বা মন্ত্র উচ্চারণে ভুল হইলে সাধকের মৃত্যু হওয়া বিচিত্র নয় ।


যোগিনী সাধন

প্রাতে উঠিয়া স্নানাদি নিত্যক্রিয়া সমাপনান্তে যথাবিধি আচমন পূর্বক “ও” হুঁং” ফট্ মন্ত্রে দিক্ বন্ধন করিতে হইবে

“ওঁ হ্রীং হুং” মন্ত্রে প্রাণায়াম করিতে হইবে।

তদনন্তন, রক্তচন্দন, আলতা, কুমকুম ও গোরচনা মিশ্রিত করিয়া তদ্দারা তাম্রপাত্রে অষ্টদল পদ্ম অংকন করিতে হইবে। এবং পদ্মের মধ্যে “ওঁ হুঁ” - এই মন্ত্রে লিখিয়া জীবন্যাস করিতে হইবে।

কিন্তু এই কার্যের পূর্বে দেবীকে নিম্নলিখিত মন্ত্রের সাহায্যে আমন্ত্রণ ও স্নান করাইতে হইবে। ওঁ আগচ্ছ সুরন্দরী স্বাহা।

ওঁ হ্রীং আগচ্ছ কামেশ্বরী স্বাহা।

ওঁ হ্রীং আগচ্ছ মনোহরে স্বাহা। ওঁ হ্রীং হুঁং রক্ষ কর্মণি আগচ্ছ কনকাবতী স্বাহা।

ওঁ হ্রীং আগচ্ছ নটিনী স্বাহা।

ওঁ হ্রীং আগচ্ছ সুরসুন্দরী স্বাহা।

উপরোল্লিখিত মন্ত্রে সপ্তবিধ অদ্যোবিদ্যা যোগিনী আহবান করিতে হইবে এবং নিম্নলিখিত মন্ত্র পাঠ পূর্বক দেবীর ধ্যান করিতে হইবে।

পূর্ণচন্দ্রনিভানানাং গৌরী বিচিত্রাম্বরধারিনীম্ । পীনতুঙ্গকুচাৎ বামাং সর্ব্বোষাম ভয় প্রদান।

ধ্যানান্তে পূৰ্ব্বলিখিত পাদ্যাদি যাবতীয় অর্ঘ্য প্রদানপূর্বক দেবীর প্রথম দিনের পূজা সমাপন করিতে হইবে। পরে প্রতিদিন ত্রিসন্ধ্যু সময়ে “ওঁ হ্রী ভুবনেশী আগচ্ছ সুরসুন্দরী বহ্নিভার্য্যে”- এই মন্ত্র প্রত্যহই এক সহস্রবার জপ করিতে হইবে। এই মন্ত্র এক মাস জপ করিয়া মাসের শেষ দিবসে দিবাভাগে নানাবিধ বলি প্রদান করিয়া ষোড়শো পচারে দেবীর অর্চ্চনা করিতে হইবে এবং নিশাকালে সাধক চিত্ত স্থির করিয়া এক হাজার বার উক্ত মন্ত্রজন করিবেন। একাগ্রমনে এইরূপ সাধন করিলে দেবীর সাক্ষাৎ দর্শনও সিদ্ধিলাভ হয়।

দেবীর দর্শন লাভ করিয়া সাধক যেরূপ প্রার্থনা করিবেন—–দেবী সাধককে সেইরূপ অভিলাষিত বর প্রদান করিবেন। বীর সাধন

বীর সাধন কার্য সচরাচর অষ্টমী অথবা চতুর্দশী তিথিতে করিতে হয়। মতান্তরে (অন্যান্য শাস্ত্রানুযায়ী)- কৃষ্ণপক্ষের কিংবা চতুর্দশী তিথি বীর সাধন কার্যের জন্য প্রশস্ত।

নিশার দ্বিতীয় যাম অতিক্রান্ত হইলে চিতার উপর একটি শব আনিয়া ধ্যান প্রবৃত্ত হইবে।

কোনভাবে ভীতগ্রস্ত হইলে চলিবে না। কৌতুকপদ কোন দৃশ্য

দেখিয়াও সাধককে অবিচলিত থাকিতে হইবে। সর্ব প্রকার চিত্তচাঞ্চল্য পরিহার পূর্বক অবিচলিত চিত্তে জপ করিতে হইবে।

অসংস্কৃত চিতা গ্রাহ্যন সংস্কার সংস্কৃতা।

চণ্ডালস্য চসংপ্রাপ্তা কেবলমাশুসিদ্ধিদা।। যে সব চিতা ধৌত করা না হয় এমন চিতাই এরূপ সাধন কার্যে ব্যবহার করিতে হইবে।

বিশেষ করিয়া যে চিতায় চণ্ডালের শবদেহ দাহ করা হইয়াছে এমন চিতা এইরূপ কাজের উপযোগী বলিয়া জানিবে। যে চিতায় চণ্ডালের দেহ দাহ করা হইয়াছে, এমন চিতায় বসিয়া সাধন করিলে শীঘ্র ফল পাওয়া যায়।

সামিষান্ন, গুরু, ছাগ, সুধা, পায়স পিষ্টক, নানাবিধ ফল ও নৈবেদ্য সংগ্রহ করিয়া এইরূপ সাধনে ব্রতী হইবে।

মহাবেলা মহাবুদ্ধি ন্যায় নিষ্ঠঃ পবিত্রবান্ ।

এভিরের সদাসাধাং নাত্রকায্যা বিচারণা। এই বীরসাধন কার্য মহাপরাক্রমশালী, বুদ্ধিমান, ন্যায়-পরায়ণ উদার, দয়াবান ইত্যাদি গুণবাচকদের পক্ষেই প্রশস্ত ।

সাধক প্রথমে স্বস্তিবাচন পূর্বক সংকল্প করিবেন।

ওঁভৎসদেভ্যাদি অমুন দেবশর্ম্মা মন্ত্রসিদ্ধিকামঃ শ্মশান সাধনমহ করিষ্যে।

ওঁহং শ্মশানধিপ ইমং সমিবান্নং বলিং গৃহ্ন গৃহ্ন । গৃহপঘ্ন বিঘ্নণিবারণং সিদ্ধিং কুরু মম প্রাযচ্ছ স্বাহা। ওঁ কালী কালী কালী মহাকালী কালীকে ঘোর নিঃস্বনে।

কালিকায়ৈ বলিং দত্ত্বা ভূতনাথায় দাপয়েৎ।। ইত্যাদি রূপে শ্মশান অধিপতি ভৈরব চতুষ্টয়কে অর্চ্চনা করিয় বলি প্রদান করিতে হইবে। শবের চৈতন্য সম্পাদন মন্ত্র

পঞ্চগব্য দ্বারা শবকে স্নান করাইয়া বা মৃগচর্ম শবের উপর স্থাপন করিয়া উপবেশন করিতে হইবে। এবং নিম্নলিখিত মন্ত্রের দ্বার (বীরমঙ্গল মন্ত্র) নিজের দেহ রক্ষা ও শবের চৈতন্য সম্পাদন করিতে হইবে।

“হুং হুং কালীকে ঘোরদংষ্ট্রে

প্রচণ্ডে চণ্ডনায়িকে দাব্বাতে দাবার হন হন শব শরীরে মহাবিঘ্নিং ছেদয় সাহা হুং কড়িতি ।।

তারপর আকন্দ তুলার দ্বারা কর্পূর ও ঘৃতের একটি প্রদীপ জ্বালিতে হইবে। সব সময় লক্ষ্য রাখিতে হইবে যে, প্রদীপ যাহাতে নিভিয়া না যায়। প্রদীপ নিভিয়া গেলে সাধকের অমঙ্গল ঘটিবার সম্ভাবনা প্রবল।  তারপর ভূতাদি· শুদ্ধি এবং যথাবিধি স্বীয় শুদ্ধি সাধন করিয়া—— শবের উপর যোগাসনে উপবিষ্ট হইয়া একাগ্রমনে জপ করিতে হইবে।

না যদি ইষ্টমন্ত্র এক অক্ষর বিশিষ্ট হয় তবে দশ হাজার বার জপ করিতে হইবে। ইষ্টমন্ত্র দুই অক্ষর বিশিষ্ট হইলে— আট হাজার বার জপ করিতে হইবে।

ইষ্টমন্ত্র তিন অক্ষর বিশিষ্ট হইলে পাঁচহাজার বার জপ করিতে হইবে ।

ইষ্টমন্ত্র চার অক্ষর বিশিষ্ট হইলে—এক হাজার বার জপ

করিলেই সিদ্ধি হইয়া থাকে ।

একক্ষরী যদি ভবেৎ দশসহস্ৰন্ততো জপেৎ। দ্ব্যক্ষরেইষ্টস্রহং স্যাত্র্যক্ষরে পঞ্চসহস্রকম।।

নিশা সময় হইতে প্রভাত পর্যন্ত জপ করা বিধেয়। ভয়ে ভীত হইলে চলিবে না৷ শেষ রাত্রে দেবী সাধকে নিশ্চয়ই অভিলাষিত বর প্রদান করিবেন।

ভূতিনী সাধন

রাত্রৌ গত্বা শ্মশানে চাজপেনদনষ্ট্রসহস্রকম্

জপান্তে কুণ্ডলবলী সমাগচ্ছতি সন্নিধিং। রুধিরাঘেণ সন্তুষ্টা মাতৃবৎ পালয়ত্যপি।

পঞ্চবিংশতি দীনারাং দদাতি ম্রিয়হেন্যথা।

নিশাকালে সাধক শ্মশানে যথাবিধি আসন সংস্থাপন করিয়া আট হাজার বার মন্ত্র জপ করিবেন। জপ শেষ হইলে তিনি কুণ্ডলবর্তী ভূতনীর দর্শন লাভ করিবেন তখন সাধক দেবীকে শোণিত অর্ঘ্য প্রদান করিয়া তাহার সন্তুষ্টি বিধান করিবেন।

দেবী পরিতৃপ্তি লাভ করিয়া সাধককে সন্তানের ন্যায় প্রতিপালন করিবেন ও প্রত্যহ সাধককে একশতটি স্বর্ণ মুদ্রা প্রদান করিবেন।

যামিনাং স্বগৃদ্বারে জপেদষ্টসহস্ৰকং!

ত্র্যহং যাবজ্জপান্তোসৌ সময়ত্যন্তিকে পুনঃ

দাসীকর্ম করতোবং গৃহসংস্কার কর্মচ।

করতি ক্ষেত্রেজং কর্ম বজ্ৰপানি প্রসাদতঃ।।

রাত্রিকালে গৃহদ্বারে বসিয়া আট হাজার বার মন্ত্র জপ করিলে তৃতীয় দিবসে নিশাকালে দেবীর দর্শন লাভ করা যায়।

দেবী প্রসন্ন হইয়া সাধকের গৃহে পরিচারিকার ন্যায় কার্য সম্পাদন করিয়া থাকেন।

শব সাধন প্রক্রিয়া

স্ত্রৈণ, পতিত, অস্পৃশ্য, দুর্নীতিপরায়ণ, শ্মশ্রুশূন্য, কুষ্ঠ ও বৃদ্ধের শবে— অথবা দুর্ভিক্ষে বা স্বেচ্ছামৃত্যুবরণকারী শব সাধন কার্যে বর্জনীয়। স্ত্রীলোকের শব সাধন কার্যে ব্যবহৃত হয় না। সদ্যমৃত শবই

সাধন কার্যে ব্যবহার করা হইয়া থাকে।

যষ্টিবিদ্ধং শূলবিদ্ধং খড়গবিদ্ধং জল মৃতং বজ্রবিদ্ধং সর্পদ্রষ্টং চণ্ডালঞ্চাবিভুতিকং।। 

পলায়ন বিশূন্যস্তু সম্মুখে রণবর্তিনাম।।

যষ্টি, শূল, অস্ত্রাঘাতে, জলে বা বজ্রাঘাতে বা সর্পদংশনে—যে চণ্ডালের মৃত্যু হয়, সেই শবের দ্বারা কার্যসিদ্ধি হইয়া থাকে। তরুণ বয়স্ক রূপবান চণ্ডাল যদি যুদ্ধে বিমুখ না হইয়া প্রাণত্যাগ করে, সেই শবের দ্বারাও কার্য সম্পাদিত হয়। কিন্তু কাপুরুষের শব কখনই শব সাধন কার্যের জন্য গ্রহণীয় নহে!

ব্রাহ্মণ গোময়ং তক্তা নাধয়েদ্বীরসাধনং।

মহা শবাঃ প্রশস্তা স্যুঃ প্রমাণং বীর সাধনে।।

ক্ষুদ্র প্রয়োগে কর্তৃনাং প্রশস্তা মৰ্ব্বসিদ্ধয়ে ।। যে ব্রাহ্মণ গোময় পরিত্যাগ পূর্বক ঐহিক কার্যসিদ্ধির জন্য সদ্যমত শব গ্রহণ করিয়া শব-সাধনায় ব্রতী হন, তাহার সাধনাও সিদ্ধ হইয়া থাকে ।

ভাবচূড়ামণি গ্রন্থ হইতে জানা যায়, শবকে প্রথমে পূজাস্থানে আনিতে হইবে।।

এবমুক্তং শবং গৃহীত্বা মূলমন্ত্রের পূজাস্থানমানয়েৎ।

তৎ সমীপং গত্বা ওঁং ফট্ ইতিশবমভুক্ষ্য ওঁং হুংমৃতকায় নমঃ। তাড়িতি পুষ্পঞ্জলিত্রয়ং দতা শবংস্পৃষ্টা প্রণমেৎ।

প্রণবান্তে মন্ত্রের শবস্য প্রোক্ষঞ্চয়ে।

প্রণবঃ কুৰ্চ্চবীজঞ্চ মৃতকায় নমশ্চ ফট্।

পুষ্পাঞ্জলিত্ৰয়ং দত্বা প্রণামেৎ স্পর্শ পূর্ববকং।

শবকে গ্রহণ করিয়া পূজা স্থানে আনিবার পর শবের নিকট যাইয়া ‘ওঁং ফট্’ এই মন্ত্রে শবকে অভুক্ষ্যণ করিতে হইবে। তারপর ‘ওঁৎ হুং মৃতকার’ এই মন্ত্রে তিনবার পুষ্পাঞ্জলি প্রদান করিয়া শস্পর্শ করিয়া প্রণাম করিতে হইবে।


প্রণাম মন্ত্র

ধীরেশ পরমানন্দ কুলেশ্বরঃ ।


আনন্দ ভৈরাবাকার বেবীপর্ষাঙ্কশঙ্কর।


ধীরেহহং ত্বাং প্রপদ্যামি উত্তিষ্ঠ চণ্ডিকাৰ্চ্চয়ে ।


অনের শবমন্ত্রের প্রণম্য ক্ষালয়েং শবং।।

উপরোক্ত মন্ত্রের দ্বারা শবকে প্রণাম করিতে হইবে এবং পরবর্তীকালে স্নান বা ধৌত করণ বিধেয়।

মন্ত্ৰ-ওঁ হুং মৃতকায় নমঃ

অনেক ক্ষালয়িত্বা সুগন্ধিজলেন স্নাপয়িত্বা বাসসা জলমুত্থাপ্য ধূপে ধূপয়িত্বা চন্দনাদিনা শব! প্রলিপৎ শবসা কটিদেশং ধৃত্বা পূজাস্থানাং সমবেৎ।


কালীতন্ত্র

তারশব্দং মৃতকায় মধ্যোহস্তেন মন্ত্রমুচ্চরেৎ। “ওঁঃ হুং মৃতকায় মঃ-মন্ত্রে শব ধৌত করিয়া সুগন্ধী জলে স্নান

শবসা স্থান মন্ত্রোহয়মিত্যাদি ।

করাইতে হইবে। এবং বস্ত্র দ্বারা শবদেহ মুছিয়া চন্দন ও গন্ধদ্রব্যে

শবদেহ লেপন করিতে হইবে।

তারপর সমস্ত শবের কটিদেশ আকর্ষণ করিয়াপূজাস্থলে আনয়ন করিবেন। ভাবচূড়ামণিতে উল্লিখিত ধূপেন ধূপিতং কৃত্বা সুগন্ধিনী বিলিপ্য।

রক্তাঙ্গো বক্তো যদি দেবেশি ভক্ষয়েৎ কুলসাধকঃ।

ততঃ কুশশয্যাং কৃত্বা পূর্বশিরসং কৃত্বা শবং স্থাপয়েৎ শবেদেহে ধূপাদি গন্ধদ্রব্য দ্বারা লেপন পূর্বক কার্যসূচনা করিে হইবে। শব যদি রক্তবর্ণ ধারণ করে, সাধকের পক্ষে অমঙ্গলজনক শবকে কুশাসনে রাখিয়া পূর্বদিকে শির স্থাপন করিতে হইবে।

শব্দের মুখে জাতিফল, লবঙ্গ, খদির, তাম্বুলাদি প্রদানপূর্ব অধোমুখ করিয়া রাখিতে হইবে এবং শবদেহের পৃষ্ঠোপরি গন্ধা দ্রব্য লেপন করিয়া বাহুমূল হইতে কটিদেশ পর্যন্ত চতুরস্রমণ্ডল অঙ্ক করিতে হইবে।

সেই মণ্ডলমধ্যে অদলষ্ট বিশিষ্ট পদ ও চারিদ্বার অঙ্কন করিয়া পদের অভ্যন্তর ভাগে ওঁং হ্রীং ফট্ মন্ত্রের সহিত পীতমন্ত্র লেখা বিধেয়।

• তদান্তর শবের উপর কম্বল আসন বিস্তার করিয়া তাহার কটিদেশ ধারণ করিতে হইবে।

শব যদি কোনরূপ উপদ্রবের শুরু করে তাহা হইলে শবদেহে নিষ্ঠিবন নিক্ষেপ করিয়া পুনরায় শবদেহ ধৌত করিয়া জপস্থলে স্থাপন করিতে হইবে।

জপস্থলের দশদিকে দ্বাদশাঙ্গুল অশ্বত্থবৃক্ষ নির্মিত যজ্ঞকাষ্ঠ প্রোথিত করিয়া পূর্বদিক হইতে শুরু করিয়া দশদিকপালদের পূজা করিতে হইবে।

সাধক নিজের নিকটে পূজার উপকরণ রাখিবেন এবং উত্তর সাধক কিছুদূরে অবস্থান করিবেন। তারপরে সাধক মূলমন্ত্র উচ্চারাস্তে ‘ত্ৰীং হ্রীং ফট্' বলিয়া অশ্বারোহণের মত শবের উপরে বসিবেন। তদনন্তর শবের কেশ আকর্ষণ করিয়া সাধক ঝুটি বাঁধিয়া দিবেন।

Post a Comment

أحدث أقدم

এখানে ক্লিক করে বই ডাউনলোড করুন